সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদকে বহুগামী পুরুষ বলা হয় কেন?

হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ও উনার প্রেমিকারাঃ 

ফটোঃ সংগৃহীত

সাবেক সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতি  এরশাদ ছিলেন একসময় বেশ ক্ষমতাধর ব্যাক্তি। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ তাকে বেশি মনে রেখেছে তার বেশ কিছু কর্মকাণ্ডের জন্য। তিনি সেনাপ্রধান বা রাষ্ট্রপতি ছিলেন ঠিকই কিন্তু তিনি ছিলেন একাধারে কবি ও প্রেমিক পুরুষ। তাকে প্রেমিক পুরুষ বললেও ভুল হবে তিনি ছিলেন বহুগামী প্রেমিক মানুষ, এটা অনেকেরই ধারণা করেন।
তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে যে, তার কবিতা লেখার কোন যোগ্যতা ছিল না। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিশিষ্ট দেশবরেণ্য কবিদের দিয়ে কবিতা লেখিয়ে নিজের বলে চালিয়ে দিতেন। বিভিন্ন পত্রিকাতে যেসব কবিতা এরশাদের নামে ছাপা হতো এগুলো মূলত ছিল সেই দেশবরেণ্য কবিদের। অবশ্য সেইসব কবিরা টাকার বিনিময়ে এরশাদকে কবিতা লিখে দিতেন। 
সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদ এইসব কবিতাগুলোকে পুঁজি করে করেছেন অনেক প্রেম ও পরকীয়া। যা প্রকাশিত হয়েছিল যায় যায় দিন নামক একটি পত্রিকাতে। বিভিন্ন প্রেমের গল্প এরশাদ নিজেই মাঝে মাঝে শিকার করতেন। তিনি নিজেই বলতেন যে, "আমি কোন মেয়ের কাছে কখনোই যাই নি। মেয়েরাই আমার প্রতি আমার কবিতার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে আমার কাছে আসতো। আমার মনে হয় আমার চেহারার মধ্যেই একটা প্রেমিক প্রেমিক ভাব আছে।"
ফটোঃ সংগৃহীত

প্রেমিক পুরুষ এরশাদের প্রেমিকা ছিল অনেক। বিভিন্ন পত্রিকার সুবাধে জানা যায় যে, আমেনা বারী, নিলা চৌধুরী, সালমা বিন হেনা, জিনাত মোশারফ, বিদিশা, মেরি, নাশিদ কামাল, শাকিলা জাফর ছিলেন অন্যতম। 
১৯৯৭ সালে তিনি জেল থেকে বের হয়েই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন, সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করেন, তার প্রেমিকাদের সম্পর্কে। তিনি বলেন আমি একজনকে খুব ভালবাসতাম। উপস্থিত সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করেন, তিনি কি জিনাত মোশারফ? সাথে সাথে তিনি উত্তর দেন, হ্যাঁ । কিন্তু তোমরা এটা পত্রিকাতে ছাপিয়ে দিও না। তোমরা আমার ছেলের বয়সী, অনুরোধ রইল তোমাদের কাছে। 
প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় জিনাতের সাথে ছিল এরশাদের পরকীয়া সম্পর্ক। জিনাত মোশারফ তখন এতটাই এরশাদের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন যে মাঝে মাঝে জিনাত বলতেন আমার নাম জিনাত হোসেন। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ক্ষমতার আসার পর উনি জেল থেকে মুক্ত হন। এরশাদের অনুরোধেই জিনাতকে সংরক্ষিত মহিলা আসন থেকে মহিলা সংসদ সদস্য করা হয়। বর্তমানে জিনাত আছেন ইংল্যান্ডে। জানা যায় জিনাত বিদেশে যাওয়ার পর এরশাদের সাথে আর যোগাযোগ রক্ষা করেন নি। 
এরশাদের আর একজন প্রেমিকা বেশ আলোচিত ছিল তিনি হচ্ছেন শাকিলা জাফর। যার বর্তমান নামের টাইটেল হচ্ছে শাকিলা শর্মা। এরশাদ যখন প্রেসিডেন্ট ছিল তখন এরশাদের এই (শাকিলা জাফর) প্রেমিকাকে বেশি দেখা যেত বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি)। উনি এরশাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা থেকে শুরু করে সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদের সাথে লংড্রাইভেও বের হতেন। যা বিভিন্ন পত্রপত্রিকা থেকে জানা যায়।
ফটোঃ সংগৃহীত

বিটিভির গানের অনুষ্ঠানগুলো শুরুই হত তার গান দিয়ে। "যদি কিছু মনে না করেন" নামক একটি অনুষ্ঠানে তিনি একটি গান গেয়েছিলেন। গানটির নাম ছিল "তুলা রাশির মেয়ে"। এই গানের সুবাদেই শাকিলা জাফরের পরিচিতি পায় দর্শকদের কাছে। তারপর এই গায়িকাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। 
এরশাদ যখন ক্ষমতাচুত্য হন তিনি (শাকিলা জাফর) অনেক দিন আত্মগোপনে ছিলেন। শাকিলা প্রথমে মান্না জাফরকে বিয়ে করেন। তাই তার নামের টাইটেলে যুক্ত হয় জাফর। তাদের একটি সন্তানও আছে। কিন্তু মান্না জাফরের সাথে শাকিলা জাফরের বিবাহ বিচ্ছেদ হয় এরশাদের সাথে পরকীয়া করার কারনে। 
বর্তমানে শাকিলা মুম্বাইতে বসবাস করেন। ভারতের এক কবিকে বিয়ে করেন এরশাদের এই সাবেক প্রেমিকা। ভারতের সেই কবির নাম হচ্ছে রবি শর্মা। এই কবির নাম অনুসারেই পরে শাকিলার নামের টাইটেল পরিবর্তন হয়ে হয় শাকিলা শর্মা। শাকিলা শর্মা এখন ভারতে বেশ ব্যাস্ত সময় পার করছেন তার সংগীতচর্চা নিয়ে। 
সাবেক বিচারপতি মোস্তফা কামালের মেয়ে নাশিদ কামালও ছিল এরশাদের প্রেমিকা। এই প্রেমিকা ছিল বেশ পলটিবাজ। এরশাদের ক্ষমতা যখন চলে যায় যায় অবস্থা তখন উনি বিয়ে করেন একজন আর্মি পার্সনকে, যার নাম ক্যাপ্টেন মুসা। কিন্তু নাশিদ কামালে সাথে মুসার বিয়েটিও বেশিদিন টিকেনি। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে উপস্থাপনা করা সহ বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষকতা করেন। 
নায়ক সালমান শাহ্‌কে আমরা সবাই চিনি। তার মায়ের নাম নীলা চৌধুরী। এই নীলা চৌধুরীর সাথেও এরশাদের পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। যার কারনে নীলা চৌধুরীর স্বামীর কমর উদ্দিন চৌধুরীর সাথে সম্পর্ক যায় যায় অবস্থায় ছিল। তিনি কিছুদিন আগে মারা গেছেন। এরশাদের সাবেক প্রেমিকা নীলা চৌধুরী এখন সিলেটে থাকেন।
ফটোঃ সংগৃহীত

হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সাবেক প্রেমিকাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিল বিদিশা। এই বিদিশা ছিল এরশাদের বয়স থেকে অনেক ছোট। বলা হয় বিদিশা ছিল তার মেয়ের বয়সী। যদিও এরশাদের নিজের কোন মেয়ে নেই। বিদিশাকে এরশাদের মেয়ের বয়সী বলার কারন, এরশাদ তার নিজের বয়সী একজন শিক্ষক আবুবকর সিদ্দিকের মেয়েকে বিয়ে করেন। 
বিএনপি জামায়াত জোটের শাসন আমালে এরশাদ-বিদিশাকে নিয়ে বেশ আলোচনা হয়। এরশাদ বিদিশার ছাড়াছাড়ি হয় এই বিএনপি জামায়াত জোটের আমলেই। কারন হিসেবে জানা গিয়েছিল, এরশাদ তার দুই বউকে দিয়ে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। এরশাদের প্রথম স্ত্রীর নাম রওশন এরশাদ। এই রওশন এরশাদ ছিল বিএনপির পক্ষে। আর এরশাদের দ্বিতীয় স্ত্রী বিদিশা ছিল এখন বিরোধী দল আওয়ামীলীগের পক্ষে। 
মূলত বিএনপি জামায়াতের চাপের মুখেই বিদিশার সাথে তার সম্পর্কের ইতি ঘটে। বিএনপি জামায়াত এরশাদকে চাপ দেয় বিদিশাকে তালাক দিতে। পরবর্তীতে বিদিশা জেলে যান এরশাদের দেয়া চুরির মামলায়। অবশ্য পরে বিদিশা জেল থেকে মুক্তও হন। জেল থেকে মুক্ত হয়ে তিনি একটি বইও লিখেন যার নাম "শত্রুর সঙ্গে বসবাস"। 
আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতার আসার পর বাংলাদেশ ডিজিটাল হওয়ার স্বাদ গ্রহণ করে। তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়ন হয়। এই ডিজিটাল হওয়ার সুবাধেই বাংলাদেশের মানুষ আবার এরশাদের নতুন এক প্রেমিকাকে দেখতে পায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এরশাদের এই প্রেমিকার নাম হচ্ছে সাথী। 
৮৮ বছর বয়সী এরশাদের সাথে এই সাথী নামের আইনজীবীর খুব ঘনিষ্ট কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক ও টুইটারে ছড়িয়ে পড়ে। সবাই বলাবলি করতে থাকে যে, এরশাদের এই বয়সেও বেহায়াপনা গেলনা। 
তবে এরশাদ তার প্রথম প্রেমিকাকে কখনই ভুলতে পারেন নি। যা জানা যায় তার আত্মজীবনী বই থেকে। তিনি তাকে নিয়ে অনেক কবিতাও লিখেছেন যদিও এই কবিতাগুলো উনি টাকা দিয়ে কিনতেন।তার আত্মজীবনী বইটির নাম হচ্ছে "সেই চিঠি"।  এরশাদ বলেছেন, ওই সময় রংপুরের কারমাইকেল কলেজে বিএ শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন তিনি। তার নিজের ভাষায়, ‘আমার নিচের ক্লাসের একটি মেয়ে একদিন আমাকে একটি চিঠি লেখে। প্রতিদিন ও ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে কলেজে আসত’। (পৃষ্ঠা: ৬৫)
এরশাদ লিখেছেন, ‘তরুণ বয়সে কোনো মেয়ের কাছ থেকে চিঠি পেলে হৃদয়ে যে কিরকম অনুভূতি ঢেউ খেলে যেতে পারে, তা কেবল ওই সৌভাগ্যের মুহূর্তটি যাদের জীবনে এসেছে, তারাই অনুভব করতে পারেন, অন্যেরা নয়।’ (পৃষ্ঠা: ৬৫)
Previous Post Next Post